• ঢাকা
  • রবিবার , ২৮ এপ্রিল ২০২৪ , সকাল ০৮:৩০
ব্রেকিং নিউজ
হোম / রাজনীতি

গাজীপুরে জায়েদার বাড়ি ঘিরে জাহাঙ্গীর-সমর্থকদের উৎসব

রিপোর্টার : অনলাইন ডেস্ক:
গাজীপুরে জায়েদার বাড়ি ঘিরে জাহাঙ্গীর-সমর্থকদের উৎসব প্রিন্ট ভিউ

অনলাইন ডেস্ক:

গাজীপুরে আজমত উল্লা খানকে দ্বিতীয়বারের মত নৌকার ভরাডুবি দেখাল, একষট্টি বছর বয়সে হঠাৎ ভোটের রাজনীতিতে নামা জায়েদা খাতুনকে পৌঁছে দিল মেয়রের আসনে, ভোটে না থেকেও সে নির্বাচনে আসলে জয় হল জায়েদার ছেলে, সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের

আজমত উল্লার ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটে পরাজয় আর জাহাঙ্গীরেরম্যাজিকনিয়ে ভোটের পরদিন রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা বিশ্লেষণ

সেসব আলোচনায় আসছে নির্বাচনে বিএনপির অনুপস্থিতি, আওয়ামী লীগের ভোট ভাগ হয়ে যাওয়া, একজন মায়ের জন্য ভোটারদের সহানুভূতি, আজমতের দুর্বলতা আর কৌশলী জাহাঙ্গীরের কারিশমার কথা

সেই সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের আট মাস আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের জন্য একটি স্পষ্ট বার্তাও দেখতে পাচ্ছেন বিশ্লেষকরা

নির্বাচন বিশ্লেষক আব্দুল আলীম বলেন, “মেয়র পদে নৌকার আজমত উল্লা খান হেরেছেন টেবিল ঘড়ির জায়েদা খাতুনের কাছে; মানে জাহাঙ্গীর আলম ভোটে না থেকেও মায়ের পেছনে থেকে যেভাবে কাজ করেছেন, তাতে আমি বলব জিতেছেন জাহাঙ্গীর আলম

তার মতে, ভোটের মাঠে নৌকা আর টেবিল ঘড়ির যে লড়াই হয়েছে, তা আসলে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের লড়াই আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক ভাগ হয়ে গেছে দুই প্রার্থীর কাছে সেই লড়াইয়ে মাকে জিতিয়ে এনেছেন ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তায় এগিয়ে থাকা জাহাঙ্গীর

জাহাঙ্গীর নিজের প্রতি ভোটারদের আকৃষ্ট করতে পেরেছে, এটা গুরুত্বপূর্ণ বলা যায় জায়েদা খাতুনের নয়, এটা জাহাঙ্গীরের বিজয় হয়েছে এটা আওয়ামী লীগের জন্য একটা বার্তা দেবে- বুঝে শুনে মাঠের বাস্তবতা দেখেই প্রার্থী দিতে হবে

আওয়ামী লীগ অবশ্য হারের বিচার বিশ্লেষণের চেয়েভালো নির্বাচনউপহার দেওয়াকেই বড় হিসেবে দেখাতে চাইছে স্থানীয় নির্বাচনের ফল জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না বলেও দাবি করছেন ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা

দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “মানুষ সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য আওয়ামী লীগ জোর করে নিজের প্রার্থীকে জেতাতে যায়নি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলেছেন এবং হয়েছে; যা সারাদেশে প্রশংসিত হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানাই

  টঙ্গী পৌরসভার ১৮ বছরের চেয়ারম্যান আজমত সিটি করপোরেশন হওয়ার পর প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থনে প্রার্থী হয়েছিলেন নির্দলীয় প্রতীকের সেই নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন জাহাঙ্গীরও

দলের চাপে শেষ পর্যন্ত তিনি আজমতকে সমর্থনের ঘোষণা দিলেও তাতে দলীয় প্রার্থীর জয় আসেনি লাখো ভোটের ব্যবধানে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আবদুল মান্নানের কাছে হেরেছিলেন আজমত

২০১৮ সালে দ্বিতীয় নির্বাচনে আজমতকে হটিয়ে দলের মনোনয়ন ছিনিয়ে নেন সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারকে প্রায় দুই লাখ ভোটে হারিয়ে মেয়র হন তিনি

কিন্তু একটি ঘরোয়া আলোচনায় মন্তব্যের জেরে জাহাঙ্গীরের দলীয় সদস্যপদ কেড়ে নেয় আওয়ামী লীগ বরখাস্ত হন মেয়র পদ থেকেও

 সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থি কার্যক্রম সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে এবার ভোটের আগে দলের ক্ষমা পেলেও মনোনয়ন আর পাননি জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগ আজমতকে প্রার্থী করায় তিনি ফের বিদ্রোহ করে বসেন এবং মনোনয়নপত্র জমা দেন

তবে খেলাপি ঋণের জামিনদার হওয়ায় তার প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায় সেই সঙ্গে দল থেকেও তাকে আবার বহিষ্কার করা হয়

পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে মা জায়েদা খাতুনের নামেও মনোনয়নপত্র কিনে রেখেছিলেন জাহাঙ্গীর নিজে প্রার্থী হতে না পেরে অনেকটাডামি প্রার্থীমায়ের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে প্রচার-প্রচারণা মূলত তিনিই চালান তার সেই জুয়াই শেষ পর্যন্ত বাজিমাত করেছে

২০১৩ সালে প্রথম সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান পেয়েছিলেন লাখ ৫৮ হাজার ৮৬৭ ভোট আর বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এম মান্নান লাখ ৬৫ হাজার ৪৪০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন ১০ লাখ ২৬ হাজার ৯৩৮ জন ভোটারের মধ্যে ৬৮ শতাংশ ওই নির্বাচনে ভোট দেন

২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর লাখ ১০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির হাসানউদ্দিন সরকার পান লাখ ৯৭ হাজার ৬১১ ভোট ১১ লাখ ৩৭ হাজারের বেশি ভোটারের মধ্যে ৫৮ শতাংশ ভোট দেন

আর এবারের নির্বাচনে বিজয়ী জায়েদা খাতুন পেয়েছেন লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পরাজিত প্রার্থী আজমত উল্লা পেয়েছেন লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট পৌনে ১২ লাখ ভোটারের মধ্যে ভোট পড়েছে ৪৮.৭৯ শতাংশ, অর্থাৎ অর্ধেকের মত

তিন নির্বাচনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রথম নির্বাচনে শীর্ষ দুই প্রার্থী মিলে পেয়েছিলেন সোয়া লাখ ভোট দ্বিতীয় নির্বাচনে সেই সংখ্যা ছিল প্রায় ছয় লাখ আর এবার তা নেমে এসেছে লাখ ৬১ হাজারে

 

তিন নির্বাচনের মধ্যে এবারই সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে, যার কারণ বিএনপির ভোট বর্জন গতবারের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হাসান সরকার হেরে গেলেও প্রায় দুই লাখ ভোট পেয়েছিলেন

বিএনপি দলীয়ভাবে প্রার্থী না হলেও হাসানউদ্দিন সরকারের ভাতিজা সরকার শাহ নূর ইসলাম রনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি পেয়েছেন ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট

তাহলে বিএনপির ভোট গেল কোথায়? ভোটের হিসাব বলছে, সেই ভোটারদের একটি অংশ এবার কেন্দ্রে আসেননি আবার একটি অংশ হয়ত ভোট দিয়েছেন জাহাঙ্গীরের মায়ের টেবিল ঘড়িতে

এই অনুমানের সমর্থন পাওয়া যায় আওয়ামী লীগের ভোটের হিসাবেও প্রথম নির্বাচনে আজমতের আড়াই লাখের পর দ্বিতীয় নির্বাচনে জাহাঙ্গীর পেয়েছিলেন চার লাখ ভোট সেটাকে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক ধরলেও এবার তার চেয়ে ৬০ হাজার ভোট বেশি পড়েছে ভাগ হয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের বাক্সে

নির্বাচন বিশ্লেষক আব্দুল আলীম বলেন, “আওয়ামী লীগের ভোটের হিসাবে দেখা যায়, আজমত উল্লা খান ২০১৩ সালের চেয়ে এবার ৭০ হাজার ভোট কম পেয়েছেন, আবার জাহাঙ্গীর ২০১৮ সালে চার লাখেরও বেশি ভোট পেলেও এবার তার মা জায়েদা খাতুন পেয়েছেন তার অর্ধেক

২০২৩ সালে আজমত উল্লা খান জায়েদা খাতুনের ভোট হিসাব করলেও চার লাখ পৌঁছেনি ভোটের মধ্যে জনপ্রিয়তা গ্রহণযোগ্যতার হিসাব নিকাশ হয়েছে

গাজীপুর মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “বিএনপি-জামায়াতের ভোট জাহাঙ্গীরের মা জায়েদার কাছে গিয়েছে প্রতিটা ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের দুজন-তিনজন করে কাউন্সিলর প্রার্থী ছিল তারা কিন্তু অনেক ভোট পেয়েছে কিন্তু নৌকার ভোটগুলো তারা সেভাবে কালেক্ট করেনিভোটের পার্থক্য বেশি ছিল না সবাই আরেকটু খেয়াল রাখলে হয়ত নৌকার ভালো হইতো

রাজনীতি

আরও পড়ুন