• ঢাকা
  • রবিবার , ২৮ এপ্রিল ২০২৪ , রাত ১১:১৩
ব্রেকিং নিউজ
হোম / অর্থ-বাণিজ্য

১৪ বছরেও চালু হয়নি কুড়িগ্রামের ১৪ কোটি টাকার প্রকল্প

রিপোর্টার : আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
১৪ বছরেও চালু হয়নি কুড়িগ্রামের ১৪ কোটি টাকার প্রকল্প প্রিন্ট ভিউ

আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:-

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার খেওয়ারচর রাবার ড্যাম প্রকল্প ১৪ বছরেও চালু হয়নি। দীর্ঘদিন থেকে অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে ৮৫ মিটার দৈর্ঘ্যের রাবার ব্যাগটি। দেখভালের অভাবে নষ্ট হয়ে ভেস্তে যেতে বসেছে এটি। এতে সরকারের ১৪ কোটি টাকা ব্যয় হলেও সেচ সুবিধা পাননি কৃষকরা। অপরিকল্পিত ও নিম্নমানের নির্মাণকাজ করা হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। প্রকল্পটি দীর্ঘদিনেও চালু না হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের দায়ী করেন কৃষকরা।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তথ্যমতে, রৌমারীর যাদুরচর ইউনিয়নের খেওয়ারচর এলাকায় জিঞ্জিরাম নদীতে ২০১০ সালে শুরু হয় রাবার ড্যাম প্রকল্পের কাজ। এ প্রকল্পে সরকারের ব্যয় হয় প্রায় ১৪ কোটি টাকা। প্রথম দফায় ১২ কোটি ও দ্বিতীয় দফায় অতিরিক্ত আরও ১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হলেও এক দিনের জন্যও সুফল মেলেনি।

খেওয়ারচর রাবার ড্যাম প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রকল্প এলাকায় শ্যালো মেশিন দিয়ে আবাদি জমিতে সেচ দিচ্ছেন কৃষকরা। প্রকল্প এলাকার লালকুড়া খেয়াঘাট-বিক্রিবিল-খেওয়ারচর রাবার ড্যাম সেতু পর্যন্ত রয়েছে তিন কিলোমিটার কাঁচা সড়ক। সড়কটি দীর্ঘদিন থেকে বেহাল। চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। নদীতে ধসে গেছে সেতুর দুই পাশের সিসি ব্লক। এ কারণে বন্যায় ভেঙে যায় পাশের বসতবাড়ি। রাবার ফোলানোর অভাবে নষ্ট হতে বসেছে ড্যামের ব্যাগটি। প্রকল্পের সুরক্ষা ও নদী শাসনের জন্য দুই কিলোমিটার সিসি ব্লক ও সড়ক নির্মাণের কথা থাকলেও তা করা হয়নি। প্রকল্পটি দেখভালের জন্য ওই এলাকায় কাউকে দেখা যায়নি।

বিক্রিবিল এলাকার কৃষক আইয়ুব আলী বলেন, প্রকল্প এলাকায় তাঁর এক বিঘা জমি রয়েছে। সেখানে বোরো ধান চাষ করেছেন। শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দিচ্ছেন জমিতে। এতে তাঁর ব্যয় হবে ১০ হাজার টাকা। রাবার ড্যামটি চালু হলে অল্প খরচে সেচ দিতে পারতেন তিনি।

প্রকল্প এলাকার কৃষক রোস্তম আলী বলেন, সরকার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে রাবার ড্যাম প্রকল্পের জন্য; কিন্তু এক দিনের জন্যও আলোর মুখ দেখেনি প্রকল্পটি। তাঁর অভিযোগ, দীর্ঘদিনেও রাবার ড্যাম প্রকল্পটি চালু হয়নি। প্রশাসন কোনো খোঁজখবরও নেয় না। তাদের (প্রশাসনের) গাফিলতিতে ভেস্তে যেতে বসেছে সরকারের প্রকল্পটি।

রাবার ড্যাম প্রকল্প এলাকার মুদি দোকানদার সজিব মিয়া। তাঁর মতে, রাবার ড্যাম নির্মাণের সময় দুই পাশে নিম্নমানের ব্লক ও বস্তা বসানো হয়েছিল। তা বন্যায় ধসে গেছে। ভাঙনে বিলীন হয়েছে কয়েকটি বসতবাড়ি।

রাবার ড্যাম প্রকল্প এলাকার সড়কে অটোভ্যান চালান খেওয়ারচরের আব্দুল আলিম। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি বেহাল। বন্যা মৌসুমে কাদা-পানি আর শুকনো মৌসুমে ধুলাবালি জমে থাকে। গাড়ি চালাতে কষ্ট হয়। যেদিন গাড়ি নষ্ট হয়, সেদিন সারাদিনের রোজগার গাড়ির মেরামতে খরচ হয়ে যায়। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাঁকে।

কথা হয় খেওয়ারচর রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির (পাবসস) সভাপতি জাফর ইকবাল রিপনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এ রাবার ড্যাম প্রকল্পের আওতায় রয়েছেন ৪১৪ কৃষক। এ ছাড়া সমিতির বাইরে রয়েছেন ১ হাজার ৭০০ কৃষক। প্রকল্পটি চালু হলে সেচ সুবিধা পাবেন ওইসব কৃষক। প্রকল্পটি চালুর বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাইয়ুম চৌধুরীর ভাষ্য, প্রকল্পের আওতায় আবাদি জমি রয়েছে ৩২০ হেক্টর। প্রকল্পটি চালু হলে কৃষকরা সারফেস ওয়াটার (ভূপৃষ্ঠস্থ পানি) ব্যবহার করতে পারবেন। কম খরচে করতে পারবেন চাষাবাদ।

এলজিইডির রৌমারী উপজেলা প্রকৌশলী মনছুরুল হক বলেন, এখানে নতুন যোগদান করেছেন তিনি। তাই উপসহকারী প্রকৌশলী ইমন চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলতে বলেন। পরে কথা হয় উপসহকারী প্রকৌশলী ইমন মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, নদীর দুই পাশে বাঁধ নির্মাণ না হওয়াসহ নানা সমস্যার কারণে প্রকল্পটি চালু করা যাচ্ছে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

অর্থনীতি

সারাদেশ

আরও পড়ুন