• ঢাকা
  • রবিবার , ২৮ এপ্রিল ২০২৪ , বিকাল ০৪:২১
ব্রেকিং নিউজ
হোম / সারাদেশ

খেলতে নেমে প্রাণ গেল স্কুলছাত্রীর

রিপোর্টার : সুমন ঘোষ
খেলতে নেমে প্রাণ গেল স্কুলছাত্রীর প্রিন্ট ভিউ

 টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : 

টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে ফুটবল টুর্নামেন্টে রিয়া আক্তার (১০) নামের এক স্কুল ছাত্রী প্রখর রোদে খেলতে নেমে মাঠেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সোমবার (২৯ মে) দুপুরে উপজেলার সহদেবপুর ইউনিয়নের দ্বীমুখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ ঘটনা ঘটে। এছাড়া, পরদিন মঙ্গলবার খেলতে নেমে সদর উপজেলার এক ছাত্রী মাঠে বমি করে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। রিয়া আক্তার কালিহাতীর ছুনটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী এবং একই গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে।

জানা যায়, অনেক ছাত্রীর অভিভাবক প্রখোর রোধে তাদের সন্তানদের খেলায় অংশ নিতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু স্কুল থেকে তাদের অনীহা কোন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এই খেলা পরিচালনা হওয়ার কথা বিকেলে। খেলা পরিচালনা ও খেলার ফিকচারের দায়িত্বে সহকারি শিক্ষা অফিসার আব্দুল আউয়াল থাকলেও তিনি ওইদিন ছুটিতে ছিলেন। ফলে তার দায়িত্বে অবহেলার বিষয় সমালোচনা চলছে। একদিকে প্রখর রোদে খেলা পরিচালনা করা হয়েছে অপরদিকে কোন প্রকার মেডিকেল টিমের ব্যবস্থা ছিলনা ওই টূর্ণামেন্টে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, খেলা পরিচালনা ও ফিকচারের দায়িত্বে সহকারি শিক্ষা অফিসার আব্দুল আউয়াল স্যার। বঙ্গাতার নামে ফুটবল টূর্ণামেন্টের মত খেলায় দায়িত্বপ্রাপ্তদের অবহেলা বিষয়টি মেনে নেওয়ার মত নয়। 

ওই শিক্ষার্থীর বাবা দেলোয়ার হোসেন বলেন, রিয়া আমার একমাত্র সন্তান ছিল। আমার মেয়ে কোন অসুস্থ্য ছিলনা। প্রচন্ড রোদের মধ্যে খেলত গিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। এভাবে যেনো আর কোন শিক্ষার্থীর প্রাণ না যায়। শিক্ষকরা এসে এরকম আর দুপুরে খেলা হবে না বলে শান্তনা দিয়ে গেছেন। 

ছুনটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, সোমবার দুপুর ২টা-৪টা পর্যন্ত তাদের বিদ্যালয়ের সাথে দিমুখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলা ছিল। রিয়া মাঠে খেলতে নেমে ৩-৪ মিনিট পরে হঠাৎ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোঘণা করেন। সোমবারই দাফন করা হয়েছে।

‘প্রখর রোদে ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের দিয়ে ফুটবল টূর্ণামেন্টে কিভাবে পরিচালনা করা হল’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি  জানান, এ বিষয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার স্যার ও সহকারি শিক্ষা অফিসার স্যার বলতে পারবেন। এছাড়া খেলা পরিচালনা ও ফিকচারের দায়িত্বে রয়েছেন এটিও স্যার।  

কালিহাতী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বলেন, বিষয়টি জানার পর আমি হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে জানতে পারি মেয়েটি মারা গেছে। বিষয়টি দু:খজনক। শুনেছি মেয়েটি আগে থেকেই অসুস্থ্য ছিল। খেলার দায়িত্বে ছিলেন আমাদের সহকারি শিক্ষা অফিসার। কিন্তু তিনি ছুটিতে ছিলেন। “অসুস্থ্য শিক্ষার্থীকে কেন খেলায় অংশগ্রহণ করানো হলো? সেখানে কোন মেডিকেল ছিল কিনা? জিজ্ঞাসা করলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। 

টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম আজাদ জানান, প্রচন্ড গরমে খেলতে গিয়ে মেয়েটি মারা গেছে। প্রচন্ড রোদে ছাত্রীদের খেলতে অসুবিধার বিষয়টি আমরা ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাকে অবগত করেছি। রিয়া আক্তারকে খেলতে নামতে বাধ্য করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি অস্বীকার করেছেন। 

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা: সুজা উদ্দিন তালুকদার জানান, এখনকার বাচ্চারা রোদের মধ্যে এ ধরনের খেলায় অভ্যস্ত নয়। প্রচন্ড রোদে হঠাৎ করে মাঠে খেলতে নামলে তাদের জীবন ঝুঁকি থাকে। রোদের তাপে অতিরিক্ত ঘাম, ডিহাইড্রেশন এমনকি হিটস্ট্রোকে তাৎক্ষণিক মৃত্যু হতে পারে। রোদের মধ্যে এভাবে বাচ্চাদের দিয়ে খেলানো উচিত নয়। বিষয়টি নীতি নির্ধারকদের বিবেচনা করা দরকার। 


সারাদেশ

আরও পড়ুন