• ঢাকা
  • রবিবার , ২৮ এপ্রিল ২০২৪ , ভোর ০৫:৩২
ব্রেকিং নিউজ
হোম / অন্যান্য

রাঙ্গাবালীতে বিলুপ্তের পথে খেজুর রসের ঐতিহ্য

রিপোর্টার : নিজস্ব প্রতিবেদক
রাঙ্গাবালীতে বিলুপ্তের পথে খেজুর রসের ঐতিহ্য প্রিন্ট ভিউ

আনোয়ার হোসাইন,রাঙ্গাবালী(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি:

এক দশক আগেও পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজলায় শীতের মৌসুম এলেই প্রত্যেক ঘর ঘর খেজুরের রস দিয়ে ফিরনি,পায়েস,রসের গুর দিয় ভাঁপা পিঠা,চিতই পিঠাসহ হরেক রকম পিঠাপুলির মহাৎসব চলতো। এমন দৃশ্য এখন আর চোখে পরেনা। কারণ আগের মত গ্রাম্য রাস্তার দুপাশে সারি সারি খেজুর গাছ দেখা যায় না। এক সময়ে খেজুর রস সংগ্রহ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতেন শত শত গাছিরা। এখন আর দেখা মিলেনা এমন দৃশ্যের। গ্রামের রাস্তাগুলো সংরক্ষন ও নতুন খেজুর গাছ রোপন মানুষের আগ্রহের অভাবের কারনে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ। তবে এখনো রাস্তার আশেপাশে কালের স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে কিছু খেজুর গাছ। উপজলার বিভিন্ন এলাকার কয়েকজন গাছি ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন এ ঐতিহ্য। তবে সেই আগের দিনের মত আর আমেজ নেই তাদের মাঝে। খেজুর গাছে মাটির হাড়ির বদলে তারা এখন প্লাস্টিকের বোতল বেঁধে  রস সংগ্রহ করছেন। গাছিয়াদের নেই  সেই অগের সাজগোজ। খোজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রামঞ্চলের কাঁচা রাস্তা সংরক্ষন ও প্রশস্তকরণ, বনাঞ্চল ধংসের কারণে হাড়িয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ। অপরদিকে গাছি পেশায় নতুন করে কেউ না আসায় হাড়িয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্য। এছারাও অনেক গাছ থেকে রস চুরি হয়ে যাওয়ায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন গাছিরা। এমন চলতে থাকলে এক সময় হাড়িয়ে যাবে খেজুর রস। এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের ফুলখালী গ্রামের বাসিন্দা মো.জাহাঙ্গীর মোল্লা বলেন, আগে আমাদের অনেকগুলো খেজুর গাছ ছিল। এখন অল্প কিছু গাছ আছে। রাস্তা সংস্কারন ও বিদ্যুতের খুটি বসানোর সময় অনেক গাছ কেটে ফেলা হয়ছে। এখন অল্প কিছু গাছ আছে তা থেকে রস  সংগ্রহ চলছে। 

ওই গ্রামের গাছি মো.হযরত খলিফা বলেন,এখন আর আগের মতো রস হয় না । তাই ৩০ টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন তিনি।  যা-ও হয় তার থেকে মালিকপক্ষকে দিতে হয়। আবার মাঝে মাঝে চোরে নিয়ে যায় । এজন্য অনক সময় রাত জেগে পাহারা ও দিতে হয়। তিনি আরো বলেন,খেজুর গাছ কমে গেছে। অল্প কিছু গাছ নিয়েছি। একটা গাছ থেকে রস সংগ্রহর প্রস্তুত করতে অনেক শ্রম ব্যায় হয়। এখন বয়স হয়েছে তাই তেমন পরিশ্রম করতে পারিনা। 

উপজলার বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের মো.আবুল বাশার আকন বলেন, খেজুর গাছ একদিকে গ্রামের শোভা বর্ধন করে অপরদিকে মুখোরচোক খাবার রস,মিঠাও পাওয়া যায়। এ গাছ আমাদের গ্রাম থেকে আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। আমাদের সকলের উচিত রাস্তার পাশে বশি পরিমাণ খেজুর গাছ রোপণ করা।

বড়বাইশদিয়া ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি সংগঠনের সভাপতি শামসুল আরিফিন বলেন,গ্রামাঞ্চলে শীতের মৌসুমে সকালে খজুরের তাজা রস যে,কতটা তৃপ্তিকর তা বলে শেষ করা যাবেনা।আগে  খেজুরের রসের প্রিয়তা ছিল তা ক্রমই কমে যাচ্ছে আর হাড়িয়ে যাচ্ছে খেজুর রসের ঐতিহ্য। এমন চলতে থাকলে একসময় আমাদের অঞ্চল থেকে খেজুরের গুর বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে আমরা বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নর বিভিন্ন রাস্তায় তালের বীজ রোপন করেছি। এরপর খজুরের চারা রোপনের কর্মসূচি হাতে নিবো ইনশাল্লাহ।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (ভার্ক) এর রাঙ্গবালী উপজলা সমন্নয়ক মাে.মহসিন তালুকদার বলেন,জলবায়ূ পরিবর্তনের কারণে আগের মতো খেজুর গাছ হচ্ছে না এবং আগের মতো  খেজুরও হয় না গাছে। তিনি আরো বলেন, এখন খেজুরের কদরও কমে গিয়াছে। আমরা ছোট সময় স্কুলে যাওয়ার সময় গাছ থেক পাকা খেজুর খেতাম কি এখন এমন দৃশ্য আর দেখা যায় না। এবং নতুন লোকজন এই পেশায় না আশায় গাছির সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।

রাঙ্গাবালী উপজলা কৃষি কর্মকর্তা মাে: আসাদুজ্জামান বলেন,শীতের মৌসুম আসলেই শীতের পিঠা,পায়েস ইত্যাদির জন্য খেজুরের রসের একটি ব্যাপক চাহিদা আবহমানকাল থেকেই ছিল। কি্ন্তু বর্তমান সময় প্রচুর খেজুর গাছ থাকলেও প্রশিক্ষিত গাছি ¯স্থানীয়ভাবে যাদেরকে (শীয়ালী/শিউলী) বলা হয় তাদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। ফলে খেজুর গাছ থাকলেও গাছির অভাব চাহিদা মাফিক খেজুরের রস পাওয়া যাচ্ছেনা।যদিও একটি খেজুরের গাছ থেকে বছরে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকার খেজুরের রস বা গুড় উৎপাদন করা সম্ভব। তবে প্রশিক্ষিত গাছির অভাব যেমন রয়ছে। পাশাপশি খেজুরের রস চুরি হয় ফলে গাছিরা উৎস হাড়িয়ে ফেলছে। ফলে খেজুরের রস যতটা উৎপাদন হওয়ার কথা ছিল ততটা উৎপাদিত হয়না। এছাড়াও আমরা বিভিন্ন সময় কৃষকদের তাল ও খেজুর ইত্যাদি গাছ রাস্তার দুপাশে রোপনের জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকি। রাঙ্গাবালীতে অনেক নতুন রাস্তা রয়ছে যার দুপাশে তালের বীজ ও খেজুর চারা রোপন করা যায়। পাশাপাশি কোন সংগঠন যদি নতুন লোক ও গাছিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতো।  তাহলে আগামী দিন চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি খেজুর রস/গুর উৎপাদন হবে।

সারাদেশ

আরও পড়ুন