• ঢাকা
  • রবিবার , ২৮ এপ্রিল ২০২৪ , দুপুর ০২:১৭
ব্রেকিং নিউজ
হোম / অন্যান্য

সাভারে হত্যা মামলা তুলে না নেওয়ায় হামলা, ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা

রিপোর্টার : নাহিদ হাসান
সাভারে হত্যা মামলা তুলে না নেওয়ায় হামলা, ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা প্রিন্ট ভিউ

নাহিদ হাসান হৃদয়, সাভারঃ

ঢাকার সাভারে হত্যা মামলা তুলে না নেওয়ায় নিহতের ছেলে রিয়াদুল ইসলাম (১৮) নামে এক যুবকের উপর হামলা চালিয়েছে আসামিপক্ষ। গত ৬ নভেম্বর রাত ৮ টার দিকে সাভার বাজার বাসস্টান্ডের সুরুচি হোটেলের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

গুরুতর আহত রিয়াদুল ইসলামকে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাতেই রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এই ঘটনায় পরদিন ভুক্তভোগী রিয়াদুলের মা ও নিহত জামাল হোসেন গোলদারের স্ত্রী মশিউড়া বেগম বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় একটি মামলা (নং -১০/৮৫৮) দায়ের করেন।

আসামিরা হলেন, ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাভার উপজেলার দক্ষিণ রাজাসন সাইনবোর্ড মোড় এলাকার আব্দুল হামিদ মাওলানার ছেলে রায়হান হামিদ(৩৬), তার বড় ভাই ফোরকান হাকিম (৪৮), ইমরান হাকিম (৪০), একই এলাকার মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে আনোয়ার (৪৫)। এছাড়াও অজ্ঞাত ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

রবিবার (১৯ নভেম্বর) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স) আব্দুল্লা বিশ্বাস।

এর আগে ১৬ সেপ্টেম্বর রিয়াদুল ইসলামের বাবা জামাল হোসেন গোলদারের সন্দেহজনক মৃত্যু হয়। তার চাচা ইমরান হোসেন গোলদার বাদী হয়ে গত ১৮ সেপ্টেম্বর আদালতে ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা (নং -১০৬৬) দায়ের করেন। পরে মামলাটি আমলে নিয়ে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও সাভার আমলী আদালত লাশ তোলার নির্দেশ দেন। মৃত্যুর ২৩ দিন পর সাভার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম রাসেল ইসলাম নূরের উপস্থিতিতে গত ৮ অক্টোবর পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের আলবেদা বাইতুন নূর জামে মসজিদের সামাজিক কবরস্থান থেকে নিহত জামাল হোসেন গোলদারের মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে পুলিশ।

নিহত জামাল হোসেন দক্ষিণ রাজাসন ঘাসমহল কাইজ্জারটেক এলাকার মৃত ফরিদ আহমেদ গোলদারের ছেলে। তিনি ঢাকার গাবতলী এলাকায় ইঞ্জিন ওয়েলের ব্যাবসা করতেন এবং রাজাসন এলাকার রিয়াদ ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী ছিলেন।

হত্যার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলার আসামিরা হলেন, সাভার পৌরসভার দক্ষিণ রাজাসন সাইনবোর্ড মোড় এলাকার আব্দুল হামিদ মাওলানার ছেলে ফোরকান হাকিম (৪৮), লোকমান হাকিম (৫১), গোফরান হাকিম (৪৫) ও ভোলা জেলার রুইতা গ্রামের আজিজ সিয়ালীর ছেলে কাঞ্চন সিয়ালী ওরফে দ্বীন মোহাম্মদ (৫৫)। তাদের মধ্যে তিনজন ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রায়হান হামিদের সহোদর ভাই ও একজন খালাতো ভাই রয়েছে।

হামলার শিকার রিয়াদুলের মা ও নিহত জামাল হোসেন গোলদারের স্ত্রী মশিউড়া বেগম বলেন, আমার স্বামীকে আসামিরা ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে। এ ঘটনা জানাজানি হলে আমার দেবর আদালতে মামলা দায়ের করেন। সেই মামলাটি তুলে নিতে কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন মহল থেকে চাপ প্রয়োগ করে আসছিল আসামিপক্ষ। মামলা তুলে নিতে না চাওয়ায় আমার সন্তান রিয়াদুলকেও হত্যার চেষ্টা করেছে তারা। এখন আমরা চরম আতঙ্কে রয়েছি। আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে বাসা থেকে বের হন নিহত জামাল হোসেন গোলদার।   দক্ষিণ রাজাসন সাইনবোর্ড এলাকার ফোরকান হাকিমের বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক ১৭ সেপ্টেম্বর রাত ১২ টা ২৫ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় স্ট্রোকজনিত কারণে হাসপাতালে নেওয়ার পূর্বেই জামাল হোসেনের মৃত্যু হয় বলে জানানো হয়।

মামলা সূত্রে নিহতের ভাই ইমরান হোসেন গোলদার জানান, গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাত ১০ টা ৪০ মিনিটে ফোরকানের মাধ্যমে মুঠোফোনে সংবাদ পাই, আমার ভাই ফোরকানের বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। খবর পেয়ে দ্রুত সেখানে আমি সহ আমাদের পরিবারের সদস্যরা হাজির হই।  সেখানে গিয়ে দেখতে পাই আমার ভাই জামাল হোসেন ফোরকানের বাড়ির উঠানে ফোরকানের কোলে উলঙ্গ, অজ্ঞান ও আধাশোয়া অবস্থায় রয়েছে।

আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে দ্রুত কোল থেকে মাটিতে শুইয়ে দিয়ে ফোরকান বলে জামাল হোসেন তার বাড়িতে এসে হটাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তাকে হাসপাতালে নেওয়া প্রয়োজন। এ সময় জামাল হোসেনের মাথায় ও দুই হাঁটুতে আঘাতের চিহ্নসহ উলঙ্গ ও অজ্ঞানের ব্যাপারে ফোরকানসহ উপস্থিত সবাইকে এর কারণ জানতে চাইলে তিনি পড়ে গিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন বলে তাকে জানানো হয়।

তাৎক্ষণিক ভাবে আমাদের পরিবারের কাউকে না নিয়েই আগে থেকে ডেকে আনা একটি প্রাইভেটকারে টানা হেঁচড়া করে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। ইমরান হোসেন তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এনাম  মেডেকেলের মর্গে ভাইকে সনাক্ত করেন। পরে পোস্টমর্টেম ছাড়াই জোরপূর্বক জামাল হোসেনকে দাফন করতে বাধ্য করেন ফোরকান হাকিম ও তার লোকজন।

তিনি আরও জানান, প্রথমে তিনি ফোরকানের কথা শুনে এটিকে স্ট্রোক করে মারা গেছেন ভেবেই ভাইকে কবরস্থ করেন। পরে তাদের কথাবার্তায় ও মৃত্যুর আলামত দেখে তার বুঝতে বাকি থাকে না যে এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ইতিপূর্বে ইমরানের ভাই জামাল হোসেন ফোরকান হাকিমের কাছে ২ লাখ টাকা পাওনা ছিলেন। পাওনা টাকা চাইলে বিভিন্ন সময় তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। প্রতিশোধ নিতে ফোরকান হাকিমের সঙ্গে লোকমান হাকিম, গোফরান হাকিম ও কাঞ্চন শিয়ালী ওরফে দিন মোহাম্মদ পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ইমরান হোসেন গোলদারের ভাই জামাল হোসেনকে হত্যা করেছে। এর দুইদিন পর সাভার মডেল থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশের পরামর্শে আদালতে মামলা করেন। মামলা প্রত্যাহার করে নিতে বিভিন্ন ধরনের ভয়-ভীতি ও হুমকি দিয়ে আসছিলেন ছাত্রলীগ নেতা রায়হান হামিদ। এতে রাজি না হওয়ায় গত ৬ নভেম্বর রাতে নিহত জামাল হোসেন গোলদারের ছেলে রিয়াদুল ইসলামকে পিটিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায় আসামিপক্ষ।

অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রায়হান হামিদের মুঠোফোনে কল করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কলটি কেটে দেন। পরে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নিহত ব্যাবসায়ী জামাল হোসেন হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স) আব্দুল্লা বিশ্বাস বলেন, বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে মামলাটি খুব গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছেন। এখনো তদন্ত চলমান। প্রাথমিক ভাবে আমরা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেয়েছি।

নিহত জামাল হোসেনের ছেলের ওপর হামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, এ ঘটনায় সাভার মডেল থানায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু হয়েছে।

সারাদেশ

আরও পড়ুন