• ঢাকা
  • রবিবার , ২৮ এপ্রিল ২০২৪ , রাত ০২:০১
ব্রেকিং নিউজ
হোম / অন্যান্য

ভূমিকম্পের সময় আমাদের করণীয়

রিপোর্টার : নিজস্ব প্রতিবেদক
ভূমিকম্পের সময় আমাদের করণীয় প্রিন্ট ভিউ

সাইফুল ইসলাম(চট্টগ্রাম)প্রতিনিধিঃ

লেখক, গবেষক -মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন

শিক্ষক-বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল (অনার্স-মাস্টার্স) মাদরাসা চট্টগ্রাম

ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় সবসময় নিচের নির্দেশনাবলি মেনে চলুন-

•   কোনোভাবেই মানসিক শক্তি হারাবেন না, সাহস রাখুন। মনে রাখবেন ভূমিকম্পে যত না ক্ষতি হয় তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয় মানসিক ভাবে ঘাবড়ে গিয়ে উল্টাপাল্টা কাজ করলে।

•  আপনি যে ঘর বা বাস অথবা বিল্ডিং এ বসবাস করছেন তা ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ কিনা জেনে নিন। এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ পুরকৌশলী (সিভিল ইঞ্জিনিয়ার/স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার) এর সহায়তা নিন। ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ ঘর বা বাসা অথবা বিল্ডিং এ বসবাস করা থেকে বিরত থাকুন।

•  আপনার ছেলে-মেয়েকে যে স্কুল-কলেজে পাঠাচ্ছেন, ঐ ভবনগুলো ভূমিকম্প সহনশীল কিনা খোঁজ-খবর নিন।

•  টর্চলাইট, রেডিও ও প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র একটি ব্যাগের মধ্যে রেখে ঘরের এমন স্থানে সংরক্ষণ করুন যাতে ভূমিকম্পের সময় সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়। মাঝে মধ্যে পরীক্ষা করে দেখুন ব্যাটারি ঠিক আছে কি-না এবং টর্চলাইট, রেডিও কার্যকর আছে কি-না।

•  জাতীয় পরিচয়পত্র, সার্টিফিকেট, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ইত্যাদি ধরনের অতি গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র ফটোকপি করে একাধিক জায়গায় রাখুন, যাতে এক সেট নষ্ট হলে অন্য সেট নিয়ে কাজ চালানো সম্ভব হয়।

• ঘরের আসবাবপত্র নির্দিষ্ট জায়গায় গুছিয়ে রাখুন। ঘরের ভিতরে চলাচলের জায়গায় আসবাবপত্র রাখবেন না।

• টেলিভিশন, কম্পিউটার, গ্যাস সিলিন্ডার, ফাইল কেবিনেট ইত্যাদি জিনিসপত্র তুলনামূলকভাবে কম উঁচুতে রাখবেন।

•  বুকশেলফ, আলমারি, ফ্রিজ ইত্যাদি উচ্চতাসম্পন্ন জিনিসপত্র শক্ত করে দেয়ালের সাথে টানা দিয়ে বেঁধে রাখুন।

•  বৈদ্যুতিক মেইন সুইচ ও গ্যাসের সুইচ কিভাবে বন্ধ করতে হয় তা পরিবারের সবাইকে জানিয়ে রাখুন।

•   যদি সম্ভব হয়, প্রতি ঘরে একটি করে আগুন নেভানোর যন্ত্র রাখুন।

•  সম্ভব হলে প্রতি ঘরে প্রত্যেকের জন্য একটি করে মাথায় পরার হেলমেট নির্দিষ্ট জায়গায় রাখুন। ভূমিকম্পের সময় এগুলো মাথায় পরে নিন। হেলমেট না-থাকলে সোফার কুশন বা বালিশ মাথার ওপর ধরে রাখুন। মনে রাখবেন হাত-পা কেটে যাওয়ার চেয়ে মাথার আঘাত অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

•   সম্ভব হলে ঘরে একটি ৪ ফুট ৬ ফুট লোহার টেবিল রাখুন। ভূমিকম্পের সময় পরিবারের সবাই উক্ত টেবিলের নিচে আশ্রয় নিন।

ভূমিকম্প চলাকালীন সময়ে কী করবেন?

•  মানসিকভাবে শান্ত থাকুন ও অন্যদের শান্ত রাখুন।

• বিল্ডিংটি বিম ও কলামের কাঠামোর ওপর নির্মিত হলে কলামের গা ঘেঁষে থাকুন। আর বিল্ডিংটি দেয়াল-নির্ভর হলে বাইরের কাছাকাছি কোনো কক্ষে থাকুন। আর বিল্ডিং দেয়াল-নির্ভর হলে বাইরের কাছাকাছি কোনো কক্ষের অবস্থান নিন। যাতে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে গেলেও উদ্ধার-কর্মীদের খুঁজে পেতে সুবিধা হয়।

•   লিফট ব্যবহার করবেন না।

•   বিদ্যুৎ চলে যেতে পারে, টর্চ ব্যবহার করুন।

*   যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হতে পারে, সজাগ থাকুন।

•   মাথায় হেলমেট, কুশন বা বালিশ দিয়ে দরজার নিচে অথবা লোহার টেবিলের নিচে আশ্রয় নিন।

•   মাটির বাড়ি ও পরিত্যক্ত বিল্ডিং থেকে যত সম্ভব দূরে থাকুন।           

ভূমিকম্পের সময় রাস্তায় থাকলে কী করবেন?

•   খোলা জায়গায় অবস্থান নিন, শান্ত থাকুন এবং সচেতন থাকুন।

•   দৌড় দেবেন না।

•   ঝুঁকিপূর্ণ বাড়িঘর থেকে দূরে থাকুন।

•   মাটির বাড়ি থেকে নিরাপদ জায়গায় চলে আসুন।

•   পুরাতন বিল্ডিং থেকে দূরে থাকুন।

•   বৈদ্যুতিক তার থেকে দূরে থাকুন।

•   ঢালু জায়গা বা দেয়াল থেকে দূরে থাকুন।


চলন্ত গাড়িতে থাকলে বা গাড়ি চালানো অবস্থায় থাকলে কী করবেন?

•   চলন্ত গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে রাখবেন।

•   খোলা জায়গায় গিয়ে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে অবস্থান নিন।

•   বৈদ্যুতিক তার থেকে গাড়ি দূরে পার্কিং করুন।

•   দেয়ালের পাশে বা গাছের নিচে গাড়ি পার্কিং করবেন না।

•   যদি খোলা জায়গায় না-থাকে তাহলে গাড়ি গা ঘেঁষে বসে পড়ুন।

ভূমিকম্প হয়ে যাওয়ার পর কী করবেন?

•   বৈদ্যুতিক ও গ্যাসের মেইন সুইচ এবং অন্যান্য সুইচ বন্ধ করুন।

•   ভূকম্পন থেমে যাওয়ার সাথে সাথে খোলা জায়গায় গিয়ে অবস্থান নিন।

•   শান্ত থাকুন, রেডিও খোলা রাখুন এবং মোবাইল দিয়ে নিকটস্থ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করুন ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনাবলি মেনে চলুন।

•   উপকূল এলাকায় সাগর অথবা নদীর পারে থাকবেন না। সাগর অথবা নদীর পানিতে বন্যা বা সুনামি হতে পারে।

•   মনে রাখবেন ভূমিকম্প একবার আসে না। পরপর অনেকবার ভূমিকম্প হতে পারে এবং কয়েকদিন পর্যন্ত হতে পারে।

•   যদি আগুন লেগে যায়, তাহলে তা নিবারণের ব্যবস্থা নিন।

•   যদি কোনো লোক মারাত্মকভাবে আহত হয়, তাহলে নিকটস্থ হাসপাতালে পাঠাবার ব্যবস্থা নিন।

•  যদি আপনি জানেন যে, কোনো লোক বিল্ডিং অথবা কোনো কিছুর নিচে চাপা পড়েছে তাহলে উদ্ধারকর্মীদের সহায়তা নিন। অহেতুক দৌড়াদৌড়ি করবেন না। তাতে আপনি ও আহত ব্যক্তির অবস্থার আরও অবনতি হতে পারে।

•  ছেড়া বৈদ্যুতিক তার থেকে দূরে থাকুন।

•  কখনও ক্ষতিগ্রস্থ ঝুঁকিপূর্ণ বিল্ডিং-এ ঢুকবেন না। আপনার বাড়ি যদি মারাত্মকভাবে ভেঙে পড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় তাহলে ঐ বাড়ি নিরাপদ কি-না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে সেখানে প্রবেশ করুন।

•  বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য ও সাধারণ ঔষধ সাথে রাখুন।

•  আশপাশে কী হয়েছে দেখার জন্য রাস্তায় অহেতুক ভিড় করবেন না।

•  উদ্ধারকর্মীদের গাড়ি/যন্ত্রপাতি চলাচলের জন্য আপনার পাশের রাস্তা পরিস্কার রাখুন।

নতুন বিল্ডিং বা কাঠামো নির্মাণ করার ক্ষেত্রে

•  যে কোনো বিল্ডিং এর নকশা তৈরি করার পূর্বেই স্ট্রাকচারাল নকশার বিধিগুলোর অনুসরণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে সঠিক স্ট্রাকচারাআল নকশা না হলে ভূমিকম্পরোধক বিল্ডিং হবে না।

•  বিল্ডিং ডিজাইনের আগেই অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা মাটির গুনাগুণ বিশ্লেষণ ও মাটির ধারণক্ষমতা নির্ভুলভাবে নির্ণয়পূর্বক রিপোর্ট তৈরি করতে হবে।

•  বিল্ডিং নির্মাণের সময় অভিজ্ঞ পুরকৌশলীদের (সিভিল ইঞ্জিনিয়ার) তদারকি রাখতে হবে যাতে গুণগতমান ঠিক থাকে।

•  সঠিক মানের সিমেণ্ট, রড, বালি ইত্যাদি ব্যবহার হচ্ছে কিনা দেখতে হবে। যেন কংক্রিটের চাপ বহন ক্ষমতা কোনো অবস্থাতেই ৩০০০ পিএসআই-এর নিচে না আসে। তার জন্য সার্বক্ষণিকভাবে লাইটে নিযুক্ত সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের দ্বারা কিউব অথবা সিলিন্ডার টেস্ট করাতে হবে। কংক্রিটের মশলা মিশানোর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত পানি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। ঢালাই’র পরে পানির ব্যবহার করে কংক্রিটের কিওরিং করতে হবে।

•   উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন রড পরীক্ষা করে ব্যবহার করতে হবে, যাতে করে রডের ক্ষমতা ৬০,০০০ পিএসআই-এর কাছাকাছি থাকে। স্ক্র্যাপ থেকে প্রস্তুতকৃত রড ব্যবহার করবেন না।

•   বর্তমানে যে হারে H, L, T, Y, U  ডিজাইনের দালান তৈরি হচ্ছে এতে ভূমিকম্পের ফলে দুর্ঘটনায় প্রবল ঝুঁকি থাকবে। আপনার বিল্ডিং যতই সোজা ও সরল হবে যেমন মোটামুটি বর্গাকার, আয়তাকার নকশা, ততই ভূমিকম্পরোধ শক্তি বেশি হবে। যদি আপনার বিল্ডিং-এর অবস্থানগত নকশা সরল বা সোজা না হয়, তাহলে ত্রি-মাত্রিক ডাইনামিক বিশ্লেষণ করে বিল্ডিং ডিজাইন করতে হবে।

•   বিল্ডিং-এর প্লান ও এলিভেশান দুইদিকই সমতা থাকতে হবে।

•  বেশি উঁচু বিল্ডিং করবেন না। বিল্ডিং কোড অনুসারে এক্সপানশান ফাঁক রাখতে হবে।

• বেশি চিকন ও উঁচু বিল্ডিং-এর পাশ হঠাৎ করে কমাবেন না। যদি কমাতে হয় তাহলে ত্রিমাত্রিক ডাইনামিক বিশ্লেষণ করে ডিজাইন করতে হবে।

• বিল্ডিং-এর উচ্চতা যদি ভবনের প্রস্থের চার (৪) গুণের অধিক হয় তাহলে ত্রি-মাত্রিক ডাইনামিক বিশ্লেষণ করে ডিজাইন করতে হবে।

•  জটিল কাঠামোগত প্লানের জন্য অবশ্যই ত্রি-মাত্রিক ভূমিকম্প বিশ্লেষণ করে ডিজাইন করতে হবে।

•  ‘শিয়ার ওয়াল’ বা কংক্রিটের দেয়াল সঠিক স্থানে বসিয়ে ভূমিকম্পরোধ শক্তির পরিমাণ বাড়াতে হবে।

•  সাম্প্রতিক সময়ে যে হারে Flat Plate Building System (বিম ছাড়া কলাম ও স্লাব) বিল্ডিং তৈরে হচ্ছে, তা মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প হলেই তার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ হবে। সুতরাং বিম, কলাম ও স্ল্যাববিশিষ্ট বিল্ডিং তৈরি করতে হবে।

•   প্রত্যেক ইঞ্জিনিয়ারকে “বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড” অনুসরণ করে বিল্ডিং এর প্লান/ডিজাইন করে ভূমিকম্পরোধক বিল্ডিং নির্মাণ করতে হবে।

•    নিচের তলা পার্কিং-এর জন্য খালি রাখতে হলে, ঐ তলার পিলারগুলো বিশেষভাবে ডিজাইন করতে হবে। প্রয়োজনমতো কংক্রিটের দেয়াল দিয়ে পিলারগুলোগতে বেষ্টনী করতে হবে।

•   বিল্ডিং-এর ‘বিমের’ থেকে ‘পিলারের’ শক্তি বেশি করে ডিজাইন করতে হবে। কমপক্ষে ২০% বেশি করতে হবে।

•  মাটির গুণাগুণের ওপর ভিত্তি করে যথাযথ ফাঊন্ডেশান প্রকৌশলগতভাবে যাচাই/বাছাই করে ডিজাইন করতে হবে।

•  ৫ ইঞ্চি ইটের দেয়ালগুলো ভূমিকম্পের জন্য আদৌ নিরাপদ নয়। তাই এই দেয়ালগুলো ছিদ্রযুক্ত ইটের ভিতরে চিকন রড দিয়ে আড়াআড়ি ও লম্বালম্বিভাবে তৈরি করে ‘লিণ্টেলের’ সাথে যুক্ত করে দিতে হবে। সবদিকে ‘লিণ্টেল’ দিতে হবে। বিশেষ করে দরজা/জানালার খোলা জায়গায় চিকন রড দিয়ে ৫ ইঞ্চি ইটের দেয়াল যুক্ত করতে হবে।

•  মনে রাখতে হবে নতুন বিল্ডিং নির্মাণে ভূমিকম্প-প্রতিরোধক নিয়মাবলি প্রয়োগ করলে, শুধুমাত্র ২-৩% নির্মাণ খরচ বৃদ্ধি পায়।


পুরাতন বিল্ডিং/ভূমিকম্প প্রতিরোধক ডিজাইন ছাড়া বিল্ডিং-এর ক্ষেত্রে

•  অভিজ্ঞ প্রকৌশলী দ্বারা বিল্ডিংগুলোর ভূমিকম্প-প্রতিরোধ ক্ষমতা পরীক্ষা করতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে আসল নির্মাণ খরচের অতিরিক্ত ২০-৪০% খরচ লাগতে পারে।

•   অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর পরামর্শে প্রয়োজনমতো প্রকৌশলগতভাবে ব্যবহারযোগ্য বিল্ডিং এর শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে ভূমিকম্পের সময় ভেঙে না পড়ে।

•   ব্যবহার-অযোগ্য/ঝুঁকিপুর্ণ বিল্ডিংগুলো অনতিবিলম্বে খালি করে ভেঙে ফেলতে হবে।

অনতিবিলম্বে যেসব স্থানে প্রচুর লোকের সমাগম ও অতিপ্রয়োজনীয় যেমন-হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়, ধর্মীয় স্থান, ড্যাম, বিদুৎ উৎপাদন ও সঞ্চালন কেন্দ্র, পেট্রোলিয়ামজাত আধার, গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজগুলোর প্রকৌশলগত কাঠামোর শক্তি পরীক্ষা করে ভবিষ্যতে ভূমিকম্পের জন্য শক্তি বৃদ্ধি করার প্রকল্প হাতে নিতে হবে।

ভূমিকম্প বিষয়ক অন্যান্য আরো পরামর্শ

•   বাড়ি নির্মাণের পূর্বে সর্ব প্রথম মাটির গুণাগুণ যাচাই করুন।

•   বাড়িঘরের ভিত ও কাঠামো শক্ত করে তৈরি করুন।

•   বিল্ডিং কোড মেনে চলুন এবং ভবন তৈরির সময় পুর-প্রকৌশলীর পরামর্শ নিন।

•   বিল্ডিং কোড অনুসারে ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য একাধিক পথ রাখুন।

•  মনে রাখবেন নিচু জলাভুমি ভরাট করে যে-সকল ভবন নির্মিত হয়, সেগুলো ভূমিকম্পের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

•   ভূমিকম্পের সময় সাহস ও মনোবল অটুট রাখুন।

•  মনে রাখবেন, ভুমিকম্প মানুষ মারে না কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ ভবনই মানুষের মৃত্যু ঘটায়।

যথাযথ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছে নিম্নের প্রস্তাবনা

•   নতুন বিল্ডিং/কাঠামোর নকশা/ডিজাইন অনুমোদনের পূর্বেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ভূমিকম্প-প্রতিরোধী স্ট্রাকচারাল কাঠামো নির্ধারণ করা।

•  অনতিবিলম্ব সংস্কারযোগ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ বিল্ডিংগুলো চিহ্নিতকরণ। সংস্কারযোগ্য বিল্ডিং/কাঠামোগুলো ভবিষ্যতে ভূমিকম্পের জন্য যথাযথ প্রকৌশলগতভাবে শক্তি বৃদ্ধিকরণ ও ঝুঁকিপূর্ণ বিল্ডিং/কাঠামোগুলো থেকে বসবাসরত মানুষজনের আনাগোনা থেকে বিরত রেখে, তা অনতিবিলম্বে ভেঙে ফেলার নির্দেশ প্রদান করা।

•  ভূমিকম্পের পরবর্তী সময়েও মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক ও রেডিওর কার্যক্রম কার্যকর থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

•   ভূমিকম্পের সময় ও পরে গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ ও টেলিফোন লাইনের নিরাপদ সঞ্চালন ও স্থাপন নিশ্চিতকরণ।

•   প্রতি জেলাতে একটি করে ‘ভূমিকম্প দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র’ নির্মাণ ও পরিচালনা করতে হবে।

•    দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাতে কম্পিউটার-ডাটা নিয়ন্ত্রিত ভূমিকম্প পরিমাপ নির্ণয়ক যন্ত্র স্থাপন করণ।

•    দেশের প্রকৌশলী, স্থপতি, নকশাকারক ও নির্মাতাদের প্রশিক্ষণ ও গবেষণার জন্য “ভূমিকম্প বিষয়ক গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র” স্থাপন।

•   টিভি, রেডিও ও সংবাদপত্রে ভূমিকম্প এর প্রতিক্রিয়া ও ঝুঁকি হ্রাসের প্রতি মনযোগ/গুরুত্ব অনুধাবনের জন্য বুলেটিন প্রচার করণ।

•    ভূমিকম্পের ব্যাপারে সচেতনতার জন্য স্কুল-কলেজে জাতীয় শিক্ষাসূচির অধীনে ভূমিকম্পের উপর ছোট পাঠদান অনুর্ভূক্তকরণ।

•   স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-মাদরাসায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে ভূমিকম্প বিষয়ক ভিডিও এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণ ও মহড়ার ব্যবস্থা করা।







ভূমিকম্পের সময় আমাদের করণীয়

লেখক, গবেষক ও স্কাউটার-মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন

শিক্ষক-বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল (অনার্স-মাস্টার্স) মাদরাসা চট্টগ্রাম


ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় সবসময় নিচের নির্দেশনাবলি মেনে চলুন-

•   কোনোভাবেই মানসিক শক্তি হারাবেন না, সাহস রাখুন। মনে রাখবেন ভূমিকম্পে যত না ক্ষতি হয় তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয় মানসিক ভাবে ঘাবড়ে গিয়ে উল্টাপাল্টা কাজ করলে।

•  আপনি যে ঘর বা বাস অথবা বিল্ডিং এ বসবাস করছেন তা ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ কিনা জেনে নিন। এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ পুরকৌশলী (সিভিল ইঞ্জিনিয়ার/স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার) এর সহায়তা নিন। ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ ঘর বা বাসা অথবা বিল্ডিং এ বসবাস করা থেকে বিরত থাকুন।

•  আপনার ছেলে-মেয়েকে যে স্কুল-কলেজে পাঠাচ্ছেন, ঐ ভবনগুলো ভূমিকম্প সহনশীল কিনা খোঁজ-খবর নিন।

•  টর্চলাইট, রেডিও ও প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র একটি ব্যাগের মধ্যে রেখে ঘরের এমন স্থানে সংরক্ষণ করুন যাতে ভূমিকম্পের সময় সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়। মাঝে মধ্যে পরীক্ষা করে দেখুন ব্যাটারি ঠিক আছে কি-না এবং টর্চলাইট, রেডিও কার্যকর আছে কি-না।

•  জাতীয় পরিচয়পত্র, সার্টিফিকেট, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ইত্যাদি ধরনের অতি গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র ফটোকপি করে একাধিক জায়গায় রাখুন, যাতে এক সেট নষ্ট হলে অন্য সেট নিয়ে কাজ চালানো সম্ভব হয়।

• ঘরের আসবাবপত্র নির্দিষ্ট জায়গায় গুছিয়ে রাখুন। ঘরের ভিতরে চলাচলের জায়গায় আসবাবপত্র রাখবেন না।

• টেলিভিশন, কম্পিউটার, গ্যাস সিলিন্ডার, ফাইল কেবিনেট ইত্যাদি জিনিসপত্র তুলনামূলকভাবে কম উঁচুতে রাখবেন।

•  বুকশেলফ, আলমারি, ফ্রিজ ইত্যাদি উচ্চতাসম্পন্ন জিনিসপত্র শক্ত করে দেয়ালের সাথে টানা দিয়ে বেঁধে রাখুন।

•  বৈদ্যুতিক মেইন সুইচ ও গ্যাসের সুইচ কিভাবে বন্ধ করতে হয় তা পরিবারের সবাইকে জানিয়ে রাখুন।

•   যদি সম্ভব হয়, প্রতি ঘরে একটি করে আগুন নেভানোর যন্ত্র রাখুন।

•  সম্ভব হলে প্রতি ঘরে প্রত্যেকের জন্য একটি করে মাথায় পরার হেলমেট নির্দিষ্ট জায়গায় রাখুন। ভূমিকম্পের সময় এগুলো মাথায় পরে নিন। হেলমেট না-থাকলে সোফার কুশন বা বালিশ মাথার ওপর ধরে রাখুন। মনে রাখবেন হাত-পা কেটে যাওয়ার চেয়ে মাথার আঘাত অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

•   সম্ভব হলে ঘরে একটি ৪ ফুট ৬ ফুট লোহার টেবিল রাখুন। ভূমিকম্পের সময় পরিবারের সবাই উক্ত টেবিলের নিচে আশ্রয় নিন।

ভূমিকম্প চলাকালীন সময়ে কী করবেন?

•  মানসিকভাবে শান্ত থাকুন ও অন্যদের শান্ত রাখুন।

• বিল্ডিংটি বিম ও কলামের কাঠামোর ওপর নির্মিত হলে কলামের গা ঘেঁষে থাকুন। আর বিল্ডিংটি দেয়াল-নির্ভর হলে বাইরের কাছাকাছি কোনো কক্ষে থাকুন। আর বিল্ডিং দেয়াল-নির্ভর হলে বাইরের কাছাকাছি কোনো কক্ষের অবস্থান নিন। যাতে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে গেলেও উদ্ধার-কর্মীদের খুঁজে পেতে সুবিধা হয়।

•   লিফট ব্যবহার করবেন না।

•   বিদ্যুৎ চলে যেতে পারে, টর্চ ব্যবহার করুন।

*   যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হতে পারে, সজাগ থাকুন।

•   মাথায় হেলমেট, কুশন বা বালিশ দিয়ে দরজার নিচে অথবা লোহার টেবিলের নিচে আশ্রয় নিন।

•   মাটির বাড়ি ও পরিত্যক্ত বিল্ডিং থেকে যত সম্ভব দূরে থাকুন।           

ভূমিকম্পের সময় রাস্তায় থাকলে কী করবেন?

•   খোলা জায়গায় অবস্থান নিন, শান্ত থাকুন এবং সচেতন থাকুন।

•   দৌড় দেবেন না।

•   ঝুঁকিপূর্ণ বাড়িঘর থেকে দূরে থাকুন।

•   মাটির বাড়ি থেকে নিরাপদ জায়গায় চলে আসুন।

•   পুরাতন বিল্ডিং থেকে দূরে থাকুন।

•   বৈদ্যুতিক তার থেকে দূরে থাকুন।

•   ঢালু জায়গা বা দেয়াল থেকে দূরে থাকুন।


চলন্ত গাড়িতে থাকলে বা গাড়ি চালানো অবস্থায় থাকলে কী করবেন?

•   চলন্ত গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে রাখবেন।

•   খোলা জায়গায় গিয়ে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে অবস্থান নিন।

•   বৈদ্যুতিক তার থেকে গাড়ি দূরে পার্কিং করুন।

•   দেয়ালের পাশে বা গাছের নিচে গাড়ি পার্কিং করবেন না।

•   যদি খোলা জায়গায় না-থাকে তাহলে গাড়ি গা ঘেঁষে বসে পড়ুন।

ভূমিকম্প হয়ে যাওয়ার পর কী করবেন?

•   বৈদ্যুতিক ও গ্যাসের মেইন সুইচ এবং অন্যান্য সুইচ বন্ধ করুন।

•   ভূকম্পন থেমে যাওয়ার সাথে সাথে খোলা জায়গায় গিয়ে অবস্থান নিন।

•   শান্ত থাকুন, রেডিও খোলা রাখুন এবং মোবাইল দিয়ে নিকটস্থ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করুন ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনাবলি মেনে চলুন।

•   উপকূল এলাকায় সাগর অথবা নদীর পারে থাকবেন না। সাগর অথবা নদীর পানিতে বন্যা বা সুনামি হতে পারে।

•   মনে রাখবেন ভূমিকম্প একবার আসে না। পরপর অনেকবার ভূমিকম্প হতে পারে এবং কয়েকদিন পর্যন্ত হতে পারে।

•   যদি আগুন লেগে যায়, তাহলে তা নিবারণের ব্যবস্থা নিন।

•   যদি কোনো লোক মারাত্মকভাবে আহত হয়, তাহলে নিকটস্থ হাসপাতালে পাঠাবার ব্যবস্থা নিন।

•  যদি আপনি জানেন যে, কোনো লোক বিল্ডিং অথবা কোনো কিছুর নিচে চাপা পড়েছে তাহলে উদ্ধারকর্মীদের সহায়তা নিন। অহেতুক দৌড়াদৌড়ি করবেন না। তাতে আপনি ও আহত ব্যক্তির অবস্থার আরও অবনতি হতে পারে।

•  ছেড়া বৈদ্যুতিক তার থেকে দূরে থাকুন।

•  কখনও ক্ষতিগ্রস্থ ঝুঁকিপূর্ণ বিল্ডিং-এ ঢুকবেন না। আপনার বাড়ি যদি মারাত্মকভাবে ভেঙে পড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় তাহলে ঐ বাড়ি নিরাপদ কি-না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে সেখানে প্রবেশ করুন।

•  বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য ও সাধারণ ঔষধ সাথে রাখুন।

•  আশপাশে কী হয়েছে দেখার জন্য রাস্তায় অহেতুক ভিড় করবেন না।

•  উদ্ধারকর্মীদের গাড়ি/যন্ত্রপাতি চলাচলের জন্য আপনার পাশের রাস্তা পরিস্কার রাখুন।

নতুন বিল্ডিং বা কাঠামো নির্মাণ করার ক্ষেত্রে

•  যে কোনো বিল্ডিং এর নকশা তৈরি করার পূর্বেই স্ট্রাকচারাল নকশার বিধিগুলোর অনুসরণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে সঠিক স্ট্রাকচারাআল নকশা না হলে ভূমিকম্পরোধক বিল্ডিং হবে না।

•  বিল্ডিং ডিজাইনের আগেই অভিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা মাটির গুনাগুণ বিশ্লেষণ ও মাটির ধারণক্ষমতা নির্ভুলভাবে নির্ণয়পূর্বক রিপোর্ট তৈরি করতে হবে।

•  বিল্ডিং নির্মাণের সময় অভিজ্ঞ পুরকৌশলীদের (সিভিল ইঞ্জিনিয়ার) তদারকি রাখতে হবে যাতে গুণগতমান ঠিক থাকে।

•  সঠিক মানের সিমেণ্ট, রড, বালি ইত্যাদি ব্যবহার হচ্ছে কিনা দেখতে হবে। যেন কংক্রিটের চাপ বহন ক্ষমতা কোনো অবস্থাতেই ৩০০০ পিএসআই-এর নিচে না আসে। তার জন্য সার্বক্ষণিকভাবে লাইটে নিযুক্ত সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের দ্বারা কিউব অথবা সিলিন্ডার টেস্ট করাতে হবে। কংক্রিটের মশলা মিশানোর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত পানি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। ঢালাই’র পরে পানির ব্যবহার করে কংক্রিটের কিওরিং করতে হবে।

•   উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন রড পরীক্ষা করে ব্যবহার করতে হবে, যাতে করে রডের ক্ষমতা ৬০,০০০ পিএসআই-এর কাছাকাছি থাকে। স্ক্র্যাপ থেকে প্রস্তুতকৃত রড ব্যবহার করবেন না।

•   বর্তমানে যে হারে H, L, T, Y, U  ডিজাইনের দালান তৈরি হচ্ছে এতে ভূমিকম্পের ফলে দুর্ঘটনায় প্রবল ঝুঁকি থাকবে। আপনার বিল্ডিং যতই সোজা ও সরল হবে যেমন মোটামুটি বর্গাকার, আয়তাকার নকশা, ততই ভূমিকম্পরোধ শক্তি বেশি হবে। যদি আপনার বিল্ডিং-এর অবস্থানগত নকশা সরল বা সোজা না হয়, তাহলে ত্রি-মাত্রিক ডাইনামিক বিশ্লেষণ করে বিল্ডিং ডিজাইন করতে হবে।

•   বিল্ডিং-এর প্লান ও এলিভেশান দুইদিকই সমতা থাকতে হবে।

•  বেশি উঁচু বিল্ডিং করবেন না। বিল্ডিং কোড অনুসারে এক্সপানশান ফাঁক রাখতে হবে।

• বেশি চিকন ও উঁচু বিল্ডিং-এর পাশ হঠাৎ করে কমাবেন না। যদি কমাতে হয় তাহলে ত্রিমাত্রিক ডাইনামিক বিশ্লেষণ করে ডিজাইন করতে হবে।

• বিল্ডিং-এর উচ্চতা যদি ভবনের প্রস্থের চার (৪) গুণের অধিক হয় তাহলে ত্রি-মাত্রিক ডাইনামিক বিশ্লেষণ করে ডিজাইন করতে হবে।

•  জটিল কাঠামোগত প্লানের জন্য অবশ্যই ত্রি-মাত্রিক ভূমিকম্প বিশ্লেষণ করে ডিজাইন করতে হবে।

•  ‘শিয়ার ওয়াল’ বা কংক্রিটের দেয়াল সঠিক স্থানে বসিয়ে ভূমিকম্পরোধ শক্তির পরিমাণ বাড়াতে হবে।

•  সাম্প্রতিক সময়ে যে হারে Flat Plate Building System (বিম ছাড়া কলাম ও স্লাব) বিল্ডিং তৈরে হচ্ছে, তা মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প হলেই তার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ হবে। সুতরাং বিম, কলাম ও স্ল্যাববিশিষ্ট বিল্ডিং তৈরি করতে হবে।

•   প্রত্যেক ইঞ্জিনিয়ারকে “বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড” অনুসরণ করে বিল্ডিং এর প্লান/ডিজাইন করে ভূমিকম্পরোধক বিল্ডিং নির্মাণ করতে হবে।

•    নিচের তলা পার্কিং-এর জন্য খালি রাখতে হলে, ঐ তলার পিলারগুলো বিশেষভাবে ডিজাইন করতে হবে। প্রয়োজনমতো কংক্রিটের দেয়াল দিয়ে পিলারগুলোগতে বেষ্টনী করতে হবে।

•   বিল্ডিং-এর ‘বিমের’ থেকে ‘পিলারের’ শক্তি বেশি করে ডিজাইন করতে হবে। কমপক্ষে ২০% বেশি করতে হবে।

•  মাটির গুণাগুণের ওপর ভিত্তি করে যথাযথ ফাঊন্ডেশান প্রকৌশলগতভাবে যাচাই/বাছাই করে ডিজাইন করতে হবে।

•  ৫ ইঞ্চি ইটের দেয়ালগুলো ভূমিকম্পের জন্য আদৌ নিরাপদ নয়। তাই এই দেয়ালগুলো ছিদ্রযুক্ত ইটের ভিতরে চিকন রড দিয়ে আড়াআড়ি ও লম্বালম্বিভাবে তৈরি করে ‘লিণ্টেলের’ সাথে যুক্ত করে দিতে হবে। সবদিকে ‘লিণ্টেল’ দিতে হবে। বিশেষ করে দরজা/জানালার খোলা জায়গায় চিকন রড দিয়ে ৫ ইঞ্চি ইটের দেয়াল যুক্ত করতে হবে।

•  মনে রাখতে হবে নতুন বিল্ডিং নির্মাণে ভূমিকম্প-প্রতিরোধক নিয়মাবলি প্রয়োগ করলে, শুধুমাত্র ২-৩% নির্মাণ খরচ বৃদ্ধি পায়।


পুরাতন বিল্ডিং/ভূমিকম্প প্রতিরোধক ডিজাইন ছাড়া বিল্ডিং-এর ক্ষেত্রে

•  অভিজ্ঞ প্রকৌশলী দ্বারা বিল্ডিংগুলোর ভূমিকম্প-প্রতিরোধ ক্ষমতা পরীক্ষা করতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে আসল নির্মাণ খরচের অতিরিক্ত ২০-৪০% খরচ লাগতে পারে।

•   অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর পরামর্শে প্রয়োজনমতো প্রকৌশলগতভাবে ব্যবহারযোগ্য বিল্ডিং এর শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে ভূমিকম্পের সময় ভেঙে না পড়ে।

•   ব্যবহার-অযোগ্য/ঝুঁকিপুর্ণ বিল্ডিংগুলো অনতিবিলম্বে খালি করে ভেঙে ফেলতে হবে।

অনতিবিলম্বে যেসব স্থানে প্রচুর লোকের সমাগম ও অতিপ্রয়োজনীয় যেমন-হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়, ধর্মীয় স্থান, ড্যাম, বিদুৎ উৎপাদন ও সঞ্চালন কেন্দ্র, পেট্রোলিয়ামজাত আধার, গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজগুলোর প্রকৌশলগত কাঠামোর শক্তি পরীক্ষা করে ভবিষ্যতে ভূমিকম্পের জন্য শক্তি বৃদ্ধি করার প্রকল্প হাতে নিতে হবে।

ভূমিকম্প বিষয়ক অন্যান্য আরো পরামর্শ

•   বাড়ি নির্মাণের পূর্বে সর্ব প্রথম মাটির গুণাগুণ যাচাই করুন।

•   বাড়িঘরের ভিত ও কাঠামো শক্ত করে তৈরি করুন।

•   বিল্ডিং কোড মেনে চলুন এবং ভবন তৈরির সময় পুর-প্রকৌশলীর পরামর্শ নিন।

•   বিল্ডিং কোড অনুসারে ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য একাধিক পথ রাখুন।

•  মনে রাখবেন নিচু জলাভুমি ভরাট করে যে-সকল ভবন নির্মিত হয়, সেগুলো ভূমিকম্পের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

•   ভূমিকম্পের সময় সাহস ও মনোবল অটুট রাখুন।

•  মনে রাখবেন, ভুমিকম্প মানুষ মারে না কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ ভবনই মানুষের মৃত্যু ঘটায়।

যথাযথ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছে নিম্নের প্রস্তাবনা

•   নতুন বিল্ডিং/কাঠামোর নকশা/ডিজাইন অনুমোদনের পূর্বেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ভূমিকম্প-প্রতিরোধী স্ট্রাকচারাল কাঠামো নির্ধারণ করা।

•  অনতিবিলম্ব সংস্কারযোগ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ বিল্ডিংগুলো চিহ্নিতকরণ। সংস্কারযোগ্য বিল্ডিং/কাঠামোগুলো ভবিষ্যতে ভূমিকম্পের জন্য যথাযথ প্রকৌশলগতভাবে শক্তি বৃদ্ধিকরণ ও ঝুঁকিপূর্ণ বিল্ডিং/কাঠামোগুলো থেকে বসবাসরত মানুষজনের আনাগোনা থেকে বিরত রেখে, তা অনতিবিলম্বে ভেঙে ফেলার নির্দেশ প্রদান করা।

•  ভূমিকম্পের পরবর্তী সময়েও মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক ও রেডিওর কার্যক্রম কার্যকর থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

•   ভূমিকম্পের সময় ও পরে গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ ও টেলিফোন লাইনের নিরাপদ সঞ্চালন ও স্থাপন নিশ্চিতকরণ।

•   প্রতি জেলাতে একটি করে ‘ভূমিকম্প দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র’ নির্মাণ ও পরিচালনা করতে হবে।

•    দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাতে কম্পিউটার-ডাটা নিয়ন্ত্রিত ভূমিকম্প পরিমাপ নির্ণয়ক যন্ত্র স্থাপন করণ।

•    দেশের প্রকৌশলী, স্থপতি, নকশাকারক ও নির্মাতাদের প্রশিক্ষণ ও গবেষণার জন্য “ভূমিকম্প বিষয়ক গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র” স্থাপন।

•   টিভি, রেডিও ও সংবাদপত্রে ভূমিকম্প এর প্রতিক্রিয়া ও ঝুঁকি হ্রাসের প্রতি মনযোগ/গুরুত্ব অনুধাবনের জন্য বুলেটিন প্রচার করণ।

•    ভূমিকম্পের ব্যাপারে সচেতনতার জন্য স্কুল-কলেজে জাতীয় শিক্ষাসূচির অধীনে ভূমিকম্পের উপর ছোট পাঠদান অনুর্ভূক্তকরণ।

•   স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-মাদরাসায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে ভূমিকম্প বিষয়ক ভিডিও এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণ ও মহড়ার ব্যবস্থা করা।

সারাদেশ

আরও পড়ুন