• ঢাকা
  • শনিবার , ২৭ এপ্রিল ২০২৪ , রাত ১০:০০
ব্রেকিং নিউজ
হোম / অন্যান্য

কুড়িগ্রামে ইজিপিপি প্রকল্পের মজুরি না পাওয়ায় ভোগান্তিতে শ্রমিকরা

রিপোর্টার : নিজস্ব প্রতিবেদক
কুড়িগ্রামে ইজিপিপি প্রকল্পের মজুরি না পাওয়ায় ভোগান্তিতে শ্রমিকরা প্রিন্ট ভিউ

আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:

কুড়িগ্রাম জেলা দুর্যোগ ও ত্রাণ পুর্নবাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার বলেন, ‘ইজিপিপি প্রকল্পে আওতায় জেলার ৯টি উপজেলায় ২৭ হাজার ৯২৮ জন শ্রমিক কাজ করছে। তাদের কেউ এখনো টাকা পায়নি। সময়মতো আমরা ২০ দিনের বিলের জন্য শ্রমিকদের কাজের বিলের বিবরণী মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সেই টাকা না পেয়েও বাকি ২০ দিনের কাজও শেষ হয়েছে। এই বিলের বিবরণী দ্রুতই আমরা পাঠিয়ে দেব।’ 

কুড়িগ্রামে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি)’ প্রকল্পের আওতায় কাজ করেও মজুরি না পেয়ে প্রায় আটাশ হাজার শ্রমিক ভোগান্তিতে, তবে অর্থ বরাদ্দে দেরি হওয়ার নির্দিষ্ট কারণ জানা নেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।

কুড়িগ্রাম জেলায় অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির (ইজিপিপি) কার্যক্রম শুরু হয় ২০১০ সাল থেকে। সেই থেকে শ্রমিকরা কাজ করে নিয়মিত মজুরি পেয়ে এলেও এবার সময়মতো মজুরি না পাওয়ায় হাজার হাজার শ্রমিক পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কর্মসূচির প্রথম দফা ৪০ দিনের কাজের মেয়াদ শেষ হলেও প্রায় দেড় মাস ধরে টাকা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদে প্রায় ২৫০ জন শ্রমিক ৪০ দিনের কর্মসূচি মাটি কাটার কাজ করেছেন। এই কর্মসূচির আওতায় জনপ্রতি শ্রমিকরা দিনে ৪০০ টাকা এবং শ্রমিকদের দলনেতা ৪৫০ টাকা করে মজুরি পায়। কিন্তু খেটে খাওয়া এসব শ্রমিকরা কাজের মেয়াদ পার হলেও এখনো মজুরি না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন। দীর্ঘ সময়ে পারিশ্রমিক না পেয়ে ধার-দেনা করে চলতে হচ্ছে তাদের। দিন এনে দিনে খাওয়া এসব শ্রমিকরা মজুরি না পেয়ে হতাশা ভুগছেন। কবে টাকা পাবেন নির্দিষ্ট কোনো তারিখ জানা নেই তাদের। দ্রুত পারিশ্রমিকের টাকা পেতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান তারা।

শ্রমিক আকলিমা বেগম বলেন, ‘গত দুই বছর ধরে ৪০ দিনের মাটি কাটার কাজ করছি। কোনো বছর এমন ভোগান্তির মুখে পড়ি নাই। অভাবে পড়ে মান সম্মানের ভয় না করে মাটি কাটার কাজ করতে এসেছি। টাকার অভাবে কনকনে ঠান্ডার মধ্যে বাচ্চাদের এবং নিজের কাপড় চোপড় কিনতে পারছি না। পুরাতন কাপড় দিয়ে শীত পার করতে হচ্ছে। আমরা গরিব মানুষ দিন এনে দিন খেতে হয়। কোনো জমানো টাকা পয়সা নেই। ধার দেনা করে লবণ, মরিচ, চালসব কিনতে হয়। ঋণ করে আর কত দিন চলব? দোকানদারেরা বাকি দেয়া বন্ধ করেছে।’

শ্রমিক আলম মিয়া বলেন, ‘৪০ দিন মাটি কেটে একটি টাকাও পাই নাই। টাকা ছাড়া সংসার কিভাবে চলছে তা ভাষায় বুঝাতে পারব না। খুবই সমস্যায় আছি। ইতোমধ্যে প্রায় ১৬ হাজার টাকা ঋণ হয়েছে। লবণ থেকে শুরু করে মাছ, গোশত সব কিছু কিনে খেতে হয়স। যখন নিয়মিত মজুরি পেতাম তখন ভালো মন্দ খাওয়া যেত। আর দু মাস থেকে টাকা দিতে না পারায় দোকানদারেরা বাকি দিতে চায় না। তাদেরও ব্যবসা করে চলতে হয়।’

আরেক শ্রমিক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমার মতো ২৫০ জন শ্রমিকের অবস্থা খুবই খারাপ। বাজারে চাল, ডাল তেলসহ অন্যান্য খরচে ৮ হাজার টাকা বাকি পড়েছে। দোকানদার প্রতিদিনই টাকার জন্য চাপ দেয়। বাকি দেয়া বন্ধ করেছে। দেড় মাসে একটি টাকাও পাই নাই। টাকা কবে পাব তাও সঠিক জানি না। স্ত্রী, সন্তান, মা-বাবা নিয়ে খুবই বিপদে আছি। সরকার যদি দ্রুত শ্রমিকের টাকা পরিশোধ করার ব্যবস্থা করতো তাহলে আমাদের খুবই উপকার হতো।’

ইজিপিপি প্রকল্পের কর্মসূচির ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের ২০ দিনের কাজের বিল পরিশোধের জন্য ডিসেম্বর মাসেই কাগজপত্র জমা দিলেও এখনো শ্রমিকরা কোনো টাকা পাননি বলে নিশ্চিত করেন ভিতরবন্দ ইউপি চেয়ারম্যান শফিউল আলম শফি।

তিনি বলেন, ‘শ্রমিকরা প্রতিদিন ফোন হোক বা সামনাসামনি বলে কবে টাকা পাব? তাদের শান্তনা দিই এই ভোটের পর পাবেন। কয়েকজন শ্রমিকের বাকির দোকান থেকে বাকি বন্ধ করে দিয়েছে। সেখানে আমি দায়িত্ব নিয়ে খরচ দিতে বলেছি। শ্রমিকরা সবাই মানবেতর জীবনযাপন করছে। কেননা তাদের আয়ের উৎস একমাত্র এই প্রকল্প। সরকার দ্রুত মজুরি পরিশোধের ব্যবস্থা নেবে এমনটাই আশা করি।’

কুড়িগ্রাম জেলা দুর্যোগ ও ত্রাণ পুর্নবাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার বলেন, ‘ইজিপিপি প্রকল্পে আওতায় জেলার ৯ টি উপজেলায় ২৭ হাজার ৯২৮ জন শ্রমিক কাজ করছে। তাদের কেউ এখনো টাকা পায়নি। সময়মতো আমরা ২০ দিনের বিলের জন্য শ্রমিকদের কাজের বিলের বিবরণী মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সেই টাকা না পেয়েও বাকি ২০ দিনের কাজও শেষ হয়েছে। এই বিলের বিবরণী দ্রুতই আমরা পাঠিয়ে দেব।’

কিন্তু শ্রমিকরা কবে নাগাদ বিল পাবে এই বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো কিছু বলতে পারেনি এই কর্মকর্তা।

সারাদেশ

আরও পড়ুন