নিউজ ডেস্কঃ
পরিবারের ছোট ছেলের নির্যাতনে বাবা মা নিজের বসতবাড়ি ছেড়েছেন অনেক আগেই। দীর্ঘ কয়েক বছর বৃদ্ধ বাবা মা অন্যান্য ছেলে মেয়ের বাড়িতে থেকে জীবন কাটলেও এখনো ক্ষোভ কেটে উঠেনি পরিবারের ছোট ছেলের। মাঝে মধ্যে নিজের বসত বাড়ি দেখতে গেলে এখনো পারিবারিক কলহের সৃষ্টি হয় ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুনতে হয় তাদের।এমনি এক ঘটনা ঘটেছে বগুড়ার ধুনট উপজেলার বেলকুচি গ্রামে।
ঐ গ্রামের মৃত শরাফতুল্লার ছেলে রমজান আলী। রমজান আলীর চার ছেলে দুই মেয়ে। রমজান আলী স্কুল শিক্ষক ছিলেন। তার স্বপ্ন সে বেঁচে থাকতেই সব সন্তানদের মাঝে জমিজমা ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক বন্টন করে লিখে দিবেন।এর ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে পরিবারে সব সন্তানকে ডেকে লিখে দেয়ার সিন্ধান্ত নেন। কিন্তু জমি রেজিস্ট্রি করার দিনে সবাই এলেও পরিবারের ছোট ছেলে রাজ্জাকুল কবির বিদুৎ তার স্ত্রী ফৌজিয়া আক্তার বিথীর কুপরামর্শে সেখানে উপস্থিত হননি। সেজন্য ছোট ছেলে রাজ্জাকুল কবির বিদুৎ এর জমির ভাগের অংশ বাবার মধ্যেই রেখে দেন। এ থেকে ছোট ছেলে বিদুৎ এর সাথে বৃদ্ধ বাবা মায়ের সাথে জমি জমার জেরে দন্ডের সৃষ্টি হয়। সেই থেকে ছোট ছলে বিদুৎ এর পৈশাচিক নির্যাতনের স্বীকার বাবা মা। মাঝে মাঝেই বিদুৎ এর স্ত্রী ফৌজিয়া আক্তার বিথী অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতো শ্বশুর শাশুড়ীর সাথে। এমনকি বিদুৎ এর বড় ভাই বোনদের সাথেও সম্পর্ক ছিন্ন করেন তারা। এভাবেই বিভিন্ন নির্যাতন করে বিতাড়িত করে দেন বৃদ্ধ বাবা মা কে।সেই থেকে বাবা ও মা বড় ভাই বোনের বাসায় জীবনযাপন করে আসছেন।
এবিষয়ে বাবা রমজান আলী গত বছরে ধুনট থানায় বিদ্যুৎ সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করলেও তখন পর্যন্ত কোনো সুরাহা না পাওয়ার ফলে একই থানায় ছোট ছেলে বিদুৎ ও তার স্ত্রীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাতেও কোন কোন সুরহা না পাওয়াতে গত বছর বগুড়া প্রেসক্লাবে ছেলের বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মেলন করেন বৃদ্ধ বাবা মা। পরের দিনে বগুড়ায় ছেলে ও তার স্ত্রীর নির্যাতনের শিকার হয়ে বাড়ি থেকে বিতাড়িত পিতা শিরোনামে বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। তারপর থেকে অদ্যবদি পর্যন্ত নিজ বাড়িতে যাইতে পারেননি বৃদ্ধ বাবা মা।
রমজান আলী মাস্টার বলেন, আমি গত বছরের ৩ ফ্রেবুয়ারিতে আমার মেজো ছেলে রফিকুল ইসলাম শাহীন ও বড় মেয়ে আন্ডার জাহান দুলালী ও আমার নাতী ফাহিমকে সাথে নিয়ে আমি আমার সম্পত্তি দেখতে বাড়ীতে যাই। সে সময় ফৌজিয়া আক্তার বিথী ও রাজ্জাকুল কবির বিদ্যুৎ এবং তার ছেলে আমার উপর চড়াও হয়ে আমাকে নানাভাবে হেনস্থা করে আমার গ্রাম হতে আমাকে বিতাড়িত করতে চাইলে আমি ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে ধুনট পুলিশের সহায়তায় ঘটনাস্থল ত্যাগ করে ধুনট থানায় তাদের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরী করেছি।
আমার অন্য ২ ছেলে ঢাকায় চাকুরীরত তাই আমার মেজ ছেলে রফিকুল ইসলাম শাহীন এর বিরুদ্ধে আয়শা আকতার নামক আমার এক নিকট আত্মীয়কে দিয়ে মিথ্যা ও বানোয়াট ভিডিও তৈরী করে ও পত্র-পত্রিকায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে ধুনট থানায় একটি শিশু অপহরন মামলায় দায়ের করেন। এমতাবস্থায় আমি ও বৃদ্ধা স্ত্রীসহ আমার অন্যান্য সন্তানদের নিয়ে ভীতু জীবনযাপন করছি। নিজের বসতবাড়িতে কি ফিরতে পারবো। আর কত সহ্য করতে হবে ছেলে ও তার স্ত্রীর নির্যাতন ।এর শেষ কবে হবে।এমন প্রত্যাশা করে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এইসব বিষয়ে জানতে ছোট ছেলে রাজ্জাকুল কবির বিদুৎ এর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। পরে তার স্ত্রী ফৌজিয়া আক্তার বিথীর সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমার শশুর শাশুড়ি সাথে কোন কিছু হয়নি বরং উল্টো ওনারা আমার স্বামী ও সন্তানের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা অভিযোগ ও মামলা করেছেন। বৃদ্ধ বাবা মা কে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করার কথা জানতে তিনি বলেন, এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি।তারা নিজেরাই নিজের বাড়িঘর ছেড়ে মেয়ের বাসায় থাকেন।
এবিষয়ে জানতে ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইদুল আলম বলেন, আমি এ থানায় নতুন। আমি আসার পর এরকম কোন ঘটনা জানিনা। তবে কেউ এ বিষয়ে অভিযোগ দিলে অবশ্যই তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।