• ঢাকা
  • বুধবার , ১৯ মার্চ ২০২৫ , সকাল ০৮:৩৪
ব্রেকিং নিউজ
হোম / সারাদেশ

দুর্নীতিই সাধন মজুমদারের সাধনা

রিপোর্টার : নিজস্ব প্রতিবেদক
দুর্নীতিই সাধন মজুমদারের সাধনা প্রিন্ট ভিউ

নবদিগন্ত ডেস্কঃ

যা থাকে নসিবে আপনা আপনিই আসিবে। এমটাই ছিল সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধনের সাধনা। দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি সাধনা করেছেন কাড়ি কাড়ি টাকার। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সাড়ে পাঁচ বছরের খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন নওগাঁর ধান ব্যবসায়ী সাধন চন্দ্র মজুমদার। মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারের সন্তান। বাবাও ছিলেন ধানের ব্যবসায়ী। ধান-চালের ওই আড়তের ব্যবসা দিয়েই চলেছে নয় ভাইবোনের বড় সংসার। সেই সাধন চন্দ্র শেখ হাসিনার ছাতায় ভর করে মন্ত্রিত্ব নিয়ে অসাধ্য সাধন করেছেন। যিনি নিজেও কখনো কল্পনা করেননি কোনো দিন মন্ত্রী হবেন। সাধন চন্দ্রের সাড়ে পাঁচ বছরের মন্ত্রিত্বকালে ঘুষ, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়নে হাজার হাজার কোটি টাকার চাঁদের হাট বসিয়েছেন তাঁর পুরো পরিবারে। সেই দুর্দান্ত দুর্নীতির বরপুত্র মন্ত্রী সাধন চন্দ্র সরকার পতনের পর লাপাত্তা ছিলেন। এরপর গত বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) রাতে তাকে রাজধানীর ভাটারা থেকে আটক করে পুলিশ।

নওগাঁর নিয়ামতপুর হাজীনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থেকে নসিব তাঁকে টেনে নিয়ে গেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর মহাদায়িত্বে। টানা চারবার এমপি হয়েছেন। গত সাড়ে ১৫ বছর সাধন চন্দ্রের জনপ্রতিনিধির জমানা ছিল নৈরাজ্য ও অরাজকতায় ভরা। ক্ষমতাকে তিনি মনে করতেন ‘জাদুর কাঠি’। সেই জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় নানা অপকর্মে জড়িয়ে নিজের ভাতিজা রাজেশ মজুমদার, ছোট ভাই মনোরঞ্জন মজুমদার মনা, ছোট মেয়ে তৃণা মজুমদার এবং দুই জামাতা আবু নাসের বেগ ও নাসিম আহম্মেদকে নিয়ে গড়ে তোলেন দুর্নীতির এক দুর্ভেদ্য সিন্ডিকেট। টাকার বিনিময়ে সব ‘অসাধ্য সাধন’ হতো মন্ত্রী সাধন চন্দ্রের আস্তানায়। শুধু তাই নয় তার পেটে ছিল খাদ্য বিভাগও।

১৮ কোটি মানুষের এ দেশে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের রয়েছে খাদ্য মজুদ ও জোগানের এক বিস্তৃত নেটওয়ার্ক। যেখানে খাদ্য বিভাগের প্রতিটি পদ অত্যন্ত লোভনীয়। প্রতিটি পদায়নে অন্তত ৩০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ কোটি টাকা পর্যন্ত নিলাম উঠত মন্ত্রীর আস্তানায়। লোভনীয় পদের মধ্যে ছিল আরসি ফুড (রিজিওনাল কন্ট্রোলার অব ফুড), ডিসি ফুড (ডিস্ট্রিক্ট কন্ট্রোলার) এবং ওসি এলএসডি (গুদাম কর্মকর্তা)। এ ছাড়া ধান-চাল বেশি উৎপাদন হয় এমন তালিকাভুক্ত জেলার বাইরেও যে কোনো স্থান ও পদে পদায়নের জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দিতে হতো সাধন সিন্ডিকেটকে। খাদ্য বিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন এসব তথ্য। ঘুষ, র্দুর্নীতির সব অপকর্ম সমন্বয় করতেন মন্ত্রীর ভাতিজা রাজেশ মজুমদার। তিনি ছিলেন খাদ্যমন্ত্রীর সহকারী; বসতেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ে। সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রীর একান্ত সচিব সাধন চন্দ্রের বড় জামাতা আবু নাসের বেগ (মাগুরার সাবেক ডিসি) ও মন্ত্রীর এপিএসের দায়িত্বে থাকা ছোট মেয়ে তৃণা মজুমদার। টাকার বিনিময়ে দপ্তরের যে কোনো পদায়ন, বদলি, বরাদ্দ-সবকিছু মন্ত্রণালয়ে বসে তাঁরাই সামলাতেন। টাকার লেনদেন হতো মন্ত্রীর বেইলি রোডের সরকারি বাসায়। সেই বাসভবন সন্ধ্যা থেকেই খাদ্য বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার পদভারে মুখর থাকত। প্রায় প্রকাশ্য নিলামের মাধ্যমে দরদাম ঠিক করে পছন্দমাফিক বদলি কিংবা পদায়ন নিতেন খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।

ভাইলীগ ও সিন্ডিকেটলীগ গড়ে হাতিয়েছেন শত কোটি টাকা:- সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার নওগাঁয় গড়েছিলেন ভাইলীগ ও সিন্ডিকেটলীগ। এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেই প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতেন। এর সঙ্গে সরকারি সব দপ্তরের নির্মাণ কাজের ২০ শতাংশ কমিশন চালু করেছিলেন ভাই লীগের সদস্যরা। ক্ষমতার অপব্যবহার করে ও খাদ্য নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। খাদ্যমন্ত্রী হলেও নওগাঁ জেলায় সড়ক, এলজিইডি, কৃষি, খাসপুকুর, সরকারি জমি ও বিভিন্ন নিয়োগ বাণিজ্য ছিল তাঁর দখলে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নওগাঁয় গড়ে তোলেন মজুমদার সাম্রাজ্য। যার প্রতিটি ধাপে ছিল অনিয়ম, দুর্নীতি ও দখল বাণিজ্য। সরকারি সব দপ্তরের নির্মাণ কাজের ২০ শতাংশ কমিশন সিন্ডিকেট চালু করেছিলেন। যে কোনো কাজ শুরু হলেই সাবেক মন্ত্রী সাধন চন্দ্রকে ২০ শতাংশ দিতে হতো। তাঁর ইশারা ছাড়া কোনো অফিস চলত না। তিনি এক পৃথক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন।

অপকর্ম-দুর্নীতির অভয়ারণ্য:- সিন্ডিকেট গড়ে নওগাঁ-১ আসনের সাবেক এমপি সাধন চন্দ্র মজুমদার মাফিয়া হয়ে ওঠেন। গড়ে তোলেন দুর্নীতির অভয়ারাজ্য। এলাকায় পুকুর লিজ, জমি দখল, সরকারি কাজের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, সরকারি প্রকল্প, সরকারি কেনাকাটা, বরাদ্দ সবই নিয়ন্ত্রণ করতেন এ সিন্ডিকেটের সদস্যরা।

সারাদেশ

আরও পড়ুন